HSC অপরিচিতা গল্পের CQ ২০২৫ | PDF Download

 ● বাংলা প্রথম পত্র ●

অপরিচিতা—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এই পোস্টে আমরা অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শিখবো। নিম্নে মোট ১০ টি প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হয়েছে এবং পোস্টের নিচে আরো প্রশ্নোত্তরের PDF file এর লিংক দেওয়া আছে , ডাউনলোড করে নিন।অপরচিতিা গল্পরে সৃজনশীল প্রশ্নরে উত্তর (CQ)

 

বই থেকে নেওয়া  অপরচিতিা গল্পরে সৃজনশীল প্রশ্নরে উত্তর : “অপরচিতিা” প্রথম প্রকাশতি হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদ


তি মাসকি “সবুজপত্র’ পত্রকিার ১৩২১ বঙ্গাব্দরে (১৯১৪) র্কাতকি সংখ্যায় । এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পরে সংকলন ‘গল্পসপ্তক’-এ এবং পরে, ‘গল্পগুচ্ছ’ তৃতীয় খণ্ডে (১৯২৭)। “অপরচিতিা” গল্পে অপরচিতিা বিশেষণের আড়ালে যে বলষ্ঠি ব্যক্তত্বিরে অধকিারী নারীর কাহিনী র্বণতি হয়েছে, তার নাম কল্যাণী । অমানবিক যৌতুক প্রথার নিমর্ম বলি হয়ছেে এমন নারীদরে গল্প ইতঃর্পূবে রচনা করছেলিনে রবীন্দ্রনাথ। কন্তিু এই গল্পইে প্রথম যৌতুক প্রথার বরিুদ্ধে নারী-পুরুষরে সম্মলিতি প্রতিরোধের কথা শোনালেন তিনি ।এ গল্পে পিতা শম্ভুনাথ সনে এবং কন্যা কল্যাণীর স্বতন্ত্র বীক্ষা ও আচরণে সমাজে গডে়-েবসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথা প্রতিরোধে সম্মুখীন হয়ছে। পিতার বলষ্ঠি প্রতিরোধ এবং কন্যা কল্যাণীর দশেচতেনায় ঋদ্ধ ব্যক্ততিরে জাগরণ ও তার অভিব্যক্তিতে গল্পটি র্সাথক ।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

১.মা মরা ছোট মেয়ে লাবনি আজ শ্বশুর বাড়ি যাবে। সুখে থাকবে এই আশায় দরিদ্র কৃষক লতিফ মিয়া আবাদের সামান্য জমিটুকু বন্ধক রেখে পণের টাকা যোগাড় করলেন। কিন্তু তাতেও কিছু টাকার ঘাটতি রয়ে গেল। এদিকে বর পারভেজের বাবা হারুন মিয়ার এক কথা সম্পূর্ণ টাকা না পেলে তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যাবেন। বিষয়টি পারভেজের কানে গেলে সে বাপকে সাফ জানিয়ে দেয়, ‘সে দরদাম বা কেনাবেচার পণ্য নয়। সে একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে, অপমান করতে নয়। ফিরতে হলে লাবনিকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরবে।’

ক. শম্ভুনাথ সেকরার হাতে কী পরখ করতে দিয়েছিলেন? 

খ. ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে।’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. অনুপম ও পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. ‘অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়।’—মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. শম্ভুনাথ স্যাকরার হাতে এয়ারিং পরখ করতে দিয়েছিলেন।

খ. উক্তিটি দ্বারা যৌতুক নিয়ে অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় কন্যা স¤প্রদানে পিতার অসম্মতির মধ্য দিয়ে কথক অনুপমের অপমানের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। 

অনুপম-কল্যাণীর বিয়ে শুরুর পূর্বে অনুপমের মামা কন্যাপক্ষ প্রদত্ত গহনাগুলো স্যাকরা দিয়ে পরখ করায়। এমন অবমাননাকর পরিস্থিতিতে অনুপমের ভূমিকা না থাকায় কল্যাণীর বাবা কন্যা সম্প্রদানের অসম্মতি জানান। বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেয়া এমন ঘটনা সচরাচর লক্ষণীয় নয়। এখানে এই ঘটনাকে অনুপমের ভাষায় বিরল এবং সমাজে অপমানজনক।

গ. অপরিচিতা গল্পের অনুপম ও উদ্দীপকের পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য দেখা যায়। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো।

অনেক যুবক আছে যারা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তাদের মানস সুগঠিত নয়। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না,পরিবারের চাপে সিদ্ধান্তের জন্য পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তারা পরিবারের পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে।

উদ্দীপকের পারভেজ স্পষ্টবাদী ও ব্যক্তিত্ববান। সে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে। এই কারণে সে যৌতুকলোভী বাবার কথার বাইরে গিয়ে বিয়ের কথা বলেছে। পাত্রী দরদাম করে বেচাকেনার কোন পণ্য নয়, তা সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে সে বলেছে যে, সে একজন জীবনসঙ্গী করতে এসেছে অপমান করতে নয়। ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম শিক্ষিত- মার্জিত। কিন্তু স্পষ্ট কথা বলার মত সাহস তার নেই। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। বিয়ের আসরে তার মামা স্যাকরা দিয়ে কনের গহনা যাচাই করেন। এতে যে কনেপক্ষের অপমান হয় তা অনুপম বুঝতে পারে না। স্যাকরাকে দিয়ে গহনা পরীক্ষা করাতে বর অনুপমের অনুমতি আছে কিনা, কনের বাবা এটা জানতে চাইলে অনুপম চুপ করে বসে থাকে। এতে তার ব্যক্তিত্বহীনতার চরম প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। এসব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, উদ্দীপকের পারভেজ এবং গল্পের অনুপম পরে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়।”—মন্তব্যটি যথার্থ। 

যারা যৌতুক দাবি করে তারা লোভী, নিষ্ঠুর, অমানুষ। বিয়েতে নিজেদের দাবিকৃত পণ না পেলে তাদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই ধরা পড়ে। এমনকি চাহিদামাফিক যৌতুক না পেলে তারা বিয়ের আসর ত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করে না। তাদের এ ধরনের আচরণ সত্যিই অমানবিক। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে মামা অনুপমের বিয়েতে টাকা ও গহনা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন এবং কন্যার পিতা এতে সম্মত হন। বিয়ের দিন, বিয়ে অনুষ্ঠানের ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি কন্যার বাবাকে কন্যার গা থেকে গহনাগুলো খুলে আনতে বলেন; তিনি তা স্যাকরা দিয়ে যাচাই করাবেন। মামা এ ধরনের আচরণ ও কথাবার্তায় তার হীনতা, লোভ ও অমানবিকতারই পরিচয় দেন। উদ্দীপকের হারুন মিয়াও অনুপমের মামার মতোই লোভী। তিনিও কন্যাপক্ষের কাছে অঢেল যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু কন্যার পিতা তা দিতে অসমর্থ হলে তিনি বিয়ের আসর থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা এবং উদ্দীপকের হারুন মিয়া উভয়ই সমগোত্রীয়। তারা লোভী, হীন ও অমানবিক। এ কারণেই তারা একসূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।  

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

২.জুয়েল আহমেদ বড় চাকরি করেন। মধ্যবিত্ত বাবার একমাত্র মেয়ে ফাতেমার সাথে তার বিয়ের দিন ধার্য হলো। পাত্র পক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ২ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক হিসেবে চাইল। এমন পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না ভেবে অসহায় পিতা রাজি হলেন। 

  ক. অনুপম হাতজোড় করার পর কার হৃদয় গলেছে? 

খ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না কেন?

গ. ‘উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।’—ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের পুরোপুরি ভাব উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে, তুমি কি একমত? পক্ষে যুক্তি দাও।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অনুপম হাতজোড় করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে। 

খ. পাত্রপক্ষের যৌতুকের স্বর্ণালংকার যাচাই করার মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না। 

কল্যাণী বধূ সাজে সেজে বিয়ের জন্য প্রস্তুত। অথচ যৌতুক লোভী পাত্রপক্ষ তাদের গহনা যাচাই করতে চাইলে তাকে গহনাগুলো খুলে দিতে হয়। পাত্রপক্ষের এই হীন-মানসিকতার ফলে শম্ভুনাথ বাবু বিয়ে ভেঙে দেন এবং কল্যাণীও পণ করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ সমাজে সে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। 

গ. উদ্দীপকে যৌতুকের বিষয়টি যেভাবে ফুটে উঠেছে তা রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

যৌতুকের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পে যথার্থরূপে তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পে বিয়ে হবে কী হবে না সেটা মুখ্য বিষয় নয়; বরং যৌতুকের গহনা খাঁটি ও পরিমাণে সঠিক কিনা সেটাই বেশি বিবেচ্য। এর ফলে বিয়ে ভেঙে গেলেও বরের যৌতুকলোভী মামার কিছু আসে যায় না। 

উদ্দীপকেও যৌতুকের বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানে বিয়ে ভেঙে যায়নি; বরং ভালো ছেলে পেয়ে কনের পিতার যৌতুক প্রদানে নিরুপায় সম্মতি লক্ষ করা যায়। সুতরাং দেখা যায় যে, উদ্দীপকটি গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে পুরোপুরি নয়; বরং কেবলমাত্র যৌতুকের বিষয়টি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। যেমন—তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, ঘটকের চাটুকারিতা, যৌতুক, নায়কের কল্পনাবিলাসী চেতনা, নারীর অগ্রগতি, বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে ভেঙে যাওয়া, নায়িকার বিয়ে না করে নারী জাতিকে শিক্ষিত করার ব্রত গ্রহণ এবং নায়কের ভুল বুঝে তা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি। 

উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কেবলমাত্র যৌতুকলোভী সমাজ ও শিক্ষিত যুবকের যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার 

হীন-মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এখানে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অন্যান্য বিষয় বা পরিমাণ অনুপস্থিত। উদ্দীপকের কনের পিতা যৌতুক প্রদানে রাজি এবং বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কোনো উল্লেখ নেই। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের অনেকগুলো বিষয় থেকে উদ্দীপকে শুধু যৌতুকের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিধি আরো বিস্তর। এখানে কনের পিতা যৌতুক যাচাই করে দেখা পাত্রপক্ষের সাথে কোন সম্পর্ক করবে না বলে অসম্মতি জ্ঞাপন করে ও বিয়ে ভেঙে দেয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। 

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৩.“দেখিলাম, এই সতের বছরের মেয়েটির উপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এখনও শৈশবের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই।” 

 ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠানো হয়েছিল? 

খ. স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন আনা হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে বয়সের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর ক্ষেত্রে কতটুকু প্রযোজ্য? বর্ণনা দাও। 

ঘ. ‘এখনও কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই’—‘অপরিচিতার’র কল্যাণীর আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য অনুপমের পিসতোতো ভাই বিনুদাদাকে পাঠানো হয়েছিল। 

খ. যৌতুক হিসেবে নেয়া গহনাগুলো খাঁটি কি-না তা পরখ করার জন্য স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে আনা হয়েছিল। 

‘অপরিচিতা’য় কল্যাণীর বিয়েতে নগদ স্বর্ণালংকার দেয়ার কথা ছিল। কিছুতেই ঠকবার পাত্র নয় বরের মামা। বিয়ের পূর্বেই তাই গহনাগুলোর গুণাগুণ পরখ করতে বাড়ির স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে যান। প্রমাণিত হয় কল্যাণীর বাবার দেয়া সকল গহনাই খাঁটি। 

গ. উদ্দীপকের বয়সের বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়িকা কল্যাণীর ক্ষেত্রে অনেকাংশেই প্রযোজ্য। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর বিয়ের সময় বয়স ছিল পনের বছর। অর্থাৎ কেবল যৌবন এসে পরিপূর্ণ করেছে তার অবয়ব। অনুপমের ভাষায়, তার গতি সহজ, দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের সূচিতা অপূর্ব, তার কোনো জড়তা নেই। অর্থাৎ যৌবন প্রাপ্তা হলেও কিশোরী সুলভ বৈশিষ্ট্যও তার মধ্যে রয়েছে। 

উদ্দীপকের মেয়েটির বয়স সতের। অর্থাৎ কল্যাণীর প্রায় সমান। তার মধ্যে যৌবনের সমস্ত আলো এসে পড়েছে অথচ আচরণে রয়েছে কৈশোরত্ব। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সুতরাং উদ্দীপকের বয়সের বিষয়টি কল্যাণীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে ধরে নেয়া যায়। 

 

ঘ. উদ্দীপকের মানসিকতায় কৈশোরের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, অথচ ‘অপরিচিতা’র কল্যাণী এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, সে ব্যক্তিত্বপূর্ণ হিসেবে গল্পে উপস্থিত হয়েছে। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী সতের বছরের তরুণী হলেও গল্পের শেষদিকে এসে তার ব্যক্তিসত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। যেখানে সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। দৈহিকভাবে সে উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অথচ মানসিকভাবে সে অনেক দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী। 

উদ্দীপকে সতের বছরের যে মেয়েটির উল্লেখ করা হয়েছে তার যৌবন উদীপ্ত আলোকে ভরপুর, বিবাহযোগ্য কিন্তু তার আচরণে রয়েছে মাত্র ছেড়ে আসা কৈশোরের বৈশিষ্ট্য, চঞ্চলতা। অর্থাৎ দেহ পূর্ণ হলেও সে আচরণে পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। 

‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর মধ্যে যে ব্যক্তিসত্তার প্রকাশ ঘটেছে তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। কেননা, উদ্দীপকের মেয়েটি কৈশোর থেকে বর্তমানে সতেরো বছর বয়সে জেগে উঠতে না পারলেও কল্যাণী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুপ্রথা যৌতুকের রিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। সে ছিল স্টেশন মাস্টারের সাথে স্পষ্টবাদী আর বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অনড়। নারী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল, যা উদ্দীপকে উঠে আসেনি।  

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৪. তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় রেহানা আক্তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি। এখন তিনি সমাজসেবামূলক একটি সংস্থায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করেন। 

ক. অনুপম হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর কার হৃদয় গলেছে? 

খ. কল্যাণী বিয়ে না করার পণ করেছে কেন?

গ. রেহানা আক্তারের সমাজসেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. “রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ।”—কথাটির যৌক্তিকতা বিচার কর।  

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অনুমপ হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে। 

খ. বিয়ের পিঁড়িতে বসেও পাত্রপক্ষের হীন মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে বিয়ে না করার পণ করেছে কল্যাণী। 

বরপক্ষ বিয়ে বাড়িতে মেয়ের গায়ের গহনা খাঁটি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ করে। এতে মেয়ের বাবা শম্ভুনাথ বাবু অপমানিত হন। তিনি মেয়েকে আর সে বাড়িতে বিয়ে দেননি। বাবার অপমান ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতায় ত্যক্ত হয়ে কল্যাণী আর বিয়ে করতে চায় না। বরং দেশব্রতে মনোযোগী হয়ে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেয়। 

গ. উদ্দীপকের রেহানা আক্তারের সেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের দিককে নির্দেশ করে। 

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, রেহানা আক্তারের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নি। সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেখানে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করছেন। তাঁর এ ব্রত ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ব্রতকেই মনে করিয়ে দেয়। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার বছর খানেক পর অনুপমের সাথে আবার দেখা হলেও আর বিয়ে করার কথা ভাবে না। সে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর ব্রত গ্রহণ করে। একাকিত্ব কাটানো ও সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের জন্যই কল্যাণী এ ব্রত গ্রহণ করে। সুতরাং বলা যায়, সেবামূলক কাজের দিকই উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর মূল দিক বলে বিবেচিত।  

ঘ. ‘রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ’।—উক্তিটি যৌক্তিক। 

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে গেলেও রেহানা আক্তার মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হননি। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করার ব্যাপারেও কোনো মত প্রকাশ করেননি। তিনি সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েনি। অনুপমের মামার পণ সম্পর্কে আদিখ্যেতা ও কল্যাণীর বাবার মনোবলের জন্য বিয়ে ভেঙে যায়। কল্যাণী তখন এলাকার মেয়ে শিশুদের পড়ালেখার ভার গ্রহণ করে। মানসিকভাবে কল্যাণী কখনোই নিজের কাছে পরাজিত হয়নি। 

তৎকালীন সমাজের অজ্ঞতা ও গোঁড়ামিকে ছাপিয়ে কল্যাণী নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পায়, যা উদ্দীপকে চিত্রিত বর্তমান সমাজে রেহানা আক্তারের মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের প্রতিবন্ধকতাকে তারা দুজনেই জয় করেছে। 

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে উদ্দীপকের রেহানা আক্তার এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী দুজনেরই মানসিক দৃঢ়তা একসূত্রে গাঁথা। কেউই সমাজের চাপিয়ে দেয়া অন্যায়ে দমে যায়নি। সুতরাং, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক।  


৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৫. বিয়ে বাড়িতে যেন মহোৎসব শুরু হয়েছে। চারিদিকে মহাধুমধাম চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে বাবা-মা অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন।  

  ক. মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য কী ছিল?

খ. মামা বাড়ির স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন এনেছিল?  

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মিলগুলো নির্দেশ কর। 

ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খÐাংশ মাত্র—কথাটির সত্যতা বিচার কর।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তিনি কারো কাছে ঠকবেন না।

খ. গহনা আসল না নকল তা পরীক্ষা করার জন্য মামা বিয়ে বাড়িতে স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিল। 

কল্যাণীর বিয়েতে বাবা নগদ পণের সাথে গহনা দিতে চান। এসব গহনা খাঁটি কিনা বা মেয়ের বাবা বরপক্ষকে ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য মামা স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে আসেন। স্যাকরা সমস্ত গহনা দেখে খাঁটি প্রমাণ করেন। 

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ে-উৎসবের আয়োজনে ব্যাপকতা ও হঠাৎ করে বিরূপ পরিবেশ চিত্রণের মিল রয়েছে। 

উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ে বাড়িতে মহাধুমধাম চলছে। সবাই আনন্দে মহোৎসব জুড়ে দিয়েছে। সবার প্রাণে বয়ে চলেছে খুশির জোয়ার। কোথাও কোনো জড়তা বা কোলাহল চোখে পড়ে না। উৎসবমুখর পরিবেশে একটি বিয়ে বাড়ির চিত্র উদ্দীপকে দেখা যায়। পাশাপাশি কনের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়াও এখানে লক্ষণীয়।

‘অপরিচিতা’ গল্পেও বিয়ে বাড়ির উৎসবমুখরতা চোখে পড়ে। বরপক্ষের অতিরঞ্জিত আয়োজন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ব্যান্ড, বাঁশি, শখের কনসার্ট কোনোটাই বাদ যায় না। মেয়ের বাড়িতেও তার ছোঁয়া লাগে। কনেপক্ষের আতিথেয়তায় বরপক্ষ খুশি হয়। কিন্তু বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে এ সবকিছুই লÐভÐের মধ্য দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের এ উভয় দিকই উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পে ফুটে উঠেছে। 

ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খÐাংশ মাত্র—কথাটি সঠিক। 

উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ির উৎসবমুখর পরিবেশ এবং সবশেষে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে মা-বাবার কান্নার চিত্র। কিন্তু ‘অপরিচিতা’ গল্পে আরো নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে ফুটে উঠেছে। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ে ভেঙে যাওয়ার চিত্র। এছাড়া যৌতুক নিয়ে অনুপমের মামার হীন মানসিকতা ও কল্যাণীর বাবার দৃঢ় মনোবল চোখে পড়ে। গল্পে কল্যাণীর ব্রত গ্রহণের বিষয়টিও চোখে পড়ে। কল্যাণী মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর ব্রত গ্রহণ করে, যা উদ্দীপকে দেখা যায় না। সর্বোপরি ‘অপরিচিতা’ গল্পে দুজন মানব-মানবীর সংসার-জীবনের সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে মানসীর প্রতি প্রেমিক হৃদয়ের দুর্বার আকাক্সক্ষার স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে, যার আভাসমাত্র উদ্দীপকে নেই। 

সুতরাং, দেখা যায় ‘অপরিচিতা’ গল্পে বিস্তারিত বর্ণনার আড়ালে যৌতুক প্রথা, সামাজিকতা ও অপূর্ণতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে ফুটে ওঠেনি। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক।  

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৬. বিয়ের আসর। চারদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ কাÐ। বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো। কনের বাবা গণি মিয়া একটি টেলিভিশন ও একটি মোটর সাইকেল বরপক্ষকে দিতে চাইল। বরের বাবা রফিউদ্দিন বললেন, “আমি আপনার মেয়ে নিতে এসেছি, কোনো যৌতুক নয়।”

 ক. বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে কে খুশি হলেন না?  

খ. গোড়াতেই এস্পার-ওস্পার হতো কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অমিলগুলো দেখাও। 

ঘ. “উদ্দীপকের রফিউদ্দিনের মনোভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তনের চাবিকাঠি।”—উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার কর।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে মামা খুশি হলেন না।

খ. শম্ভুনাথ বাবুর উকিল বন্ধুটি যদি বরপক্ষকে বিশেষ খাতির না করতেন তাহলে শুরুতেই একটা এস্পার-ওস্পার হতো। 

শম্ভুনাথ বাবুর এককালে প্রচুর টাকা-পয়সা থাকলেও বর্তমানে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁর বাড়ির উঠানে বরযাত্রীদের জায়গা সংকুলান হয় না, সমস্ত আয়োজনও মধ্যম রকমের। এসব কারণে বরপক্ষ সন্তুষ্ট নয়। এমতাবস্থায় তার উকিল বন্ধুটি যদি বরকর্তাদের প্রত্যেককে বিশেষ সমাদর না করতেন তবে বিয়েটা হয়তো শুরুতেই এস্পার-ওস্পার হতো। 

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের যৌতুক নেয়ার ঘটনা এবং মামার মানসিকতার বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা যৌতুক নেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। তাই তিনি অনুপমের বিয়েতে যৌতুকের গহনা নিয়ে বড় রকমের হীনমন্যতার পরিচয় দেন। ফলে বিয়ে ভেঙে দেন পাত্রীর বাবা। 

উদ্দীপকের রফিউদ্দিন যৌতুক প্রথার বিরোধী ছিলেন। তাই ছেলের বিয়েতে যৌতুক চাননি। শুধু তাই নয়, মেয়ের বাবা উপহার দিলেও তিনি সেগুলো নিতে চান না। অন্যদিকে ‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখা যায়, মামা অনুপমের বিয়ের আগেই যৌতুকের কথা সেরে ফেলেন। তিনি বিয়ে বাড়িতে স্যাকরা নিয়ে উপস্থিত হন, যাতে মেয়ের বাবা তাঁকে কোনো মতেই ফাঁকি দিতে না পারেন। অর্থাৎ, মামার মানসিকতা এভাবে তৈরি হয়েছে যে, বিয়েতে যৌতুক নিতে হবে এবং যে পরিমাণ যৌতুক চাইবেন মেয়ের বাবা সে পরিমাণ যৌতুক দিতে গিয়ে তাঁকে কোনোরকম ঠকাতে পারবেন না। এছাড়াও মামা মনে করেন, যে মেয়ে ঘরে আসবে সে যেন মাথা হেঁট করে থাকে। এভাবে উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামার মানসিকতা এবং যৌতুক নেয়ার ঘটনার পার্থক্য রয়েছে। উপরন্তু উদ্দীপকে বিয়েটি সুসম্পন্ন হলেও আলোচ্য গল্পে বিয়ের আসরেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। 

ঘ. উদ্দীপকের রফিউদ্দিনের যৌতুক না দেয়ার মনোভাবই ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তনের চাবিকাঠি। মন্তব্যটি যথার্থ। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা যৌতুক নেয়ার মানসিকতাই গল্পের নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদের কারণ। মামার এরূপ মানসিকতার কারণেই মেয়ের বাবা মেয়েকে অনুপমের হাতে তুলে দেবার সাহস পান না। 

উদ্দীপকের রফিউদ্দিন একজন উদার মনের মানুষ। তাই মেয়ের বাবা তাদেরকে উপহার দিলেও তিনি সেগুলো নিতে নারাজ। কারণ তিনি মনে করেন, তারা উপহার বা যৌতুক নিতে আসেননি। এসেছে ছেলের জন্য মেয়েকে নিতে। অন্যদিকে, ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের বিয়েতে মেয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মেয়ের বাবার দেয়া যৌতুকের প্রতি। ফলে বিয়ে ভেঙে  যায়। আর অনুপম ও কল্যাণী চিরদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

উদ্দীপকের রফিউদ্দিনের যৌতুক না নেয়ার মনোভাবই পারে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তন করতে। কেননা, ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা যদি রফিউদ্দিনের মতো হতেন তাহলে অনুপমের বিয়ে ভেঙে যেত না। আর গল্পের পরিণতিও এমন করুণ হতো না। তাই আমরা বলতে পারি, রফিউদ্দিনের যৌতুকবিরোধী মনোভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তনে সক্ষম। প্রশ্নোল্লিখিত উক্তিটি যুক্তিযুক্ত। 

  

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৭. জোছনার বিয়ে। সে সবেমাত্র যৌবনে পা দিয়েছে। সে গরিবের মেয়ে। তার আরো দুটি বোন আছে। অনেক জায়গা থেকে তার বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু যৌতুকের জন্য তার বিয়ে হয় না।  

 ক. অনুপমের আসল অভিভাবক কে? 

খ. ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয় কেন? বুঝিয়ে লেখ। 

গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল চিত্রটি উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি।—মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. অনুপমের আসল অভিভাবক তার মামা।

খ. ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয়। কারণ ধনীর মেয়েরা মাথা হেঁট করে স্বামীর সংসারে থাকতে নারাজ। 

মামা অনুপমের জন্য এমন পাত্রী খুঁজছেন যার বাবা ধনী নয়। কারণ ধনীর কন্যা সংসারের সকল যন্ত্রণা, অপমান নীরবে সহ্য করবে না। অন্যদিকে গরিবের কন্যা এসব কিছু মাথা পেতে নীরবে সহ্য করে যাবে। অনুপমের ঘরে যে মেয়ে আসবে সে মাথা হেঁট করেই আসবেÑ এটিই মামার প্রত্যাশা।  

গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে নির্দেশিত বাল্যবিয়ে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

একটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেয়া এবং বরপক্ষের দাবিকৃত যৌতুক-এ দুয়ের চাপে কন্যার পিতা পিষ্ট হন। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে কন্যার বিয়ে দিতে না পারলে সমাজে তিনি অপমানিত হবেন এবং বরপক্ষকে যৌতুক দিতে না পারলে তার কন্যা সুখী হবে না। এ দুয়ে মিলে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থা হয় শোচনীয়। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়িকা কল্যাণীকে পনেরো বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে শম্ভুনাথ বাবুকে একদিকে যৌতুকের টাকা জোগাড় করতে হয়, অন্যদিকে বরের বাবার কাছে নানাভাবে অপমানিত হতে হয়। উদ্দীপকেও বাল্যবিয়ে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থাও তাই। সেখানে কন্যার মাত্র শৈশব পার হয়েছে। কিন্তু পিতা ভালো পাত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ, কন্যার পিতা বড়লোক নন, তিনি বেশি যৌতুক দিতে পারবেন না। এছাড়া বয়স বেশি হলে যৌতুক বেশি লাগবে। 

ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল চিত্রটি উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। মন্তব্যটি যথার্থ।

যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে এটি আমাদের সমাজে ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। কন্যার বিয়েতে বরপক্ষের চাহিদার সীমা থাকে না। আর সেটি মেটাতে গিয়ে কন্যার পিতাকে কখনো কখনো সর্বস্বান্ত হতে হয়। যারা যৌতুক দাবি করে তারা অমানবিক ও আত্মসম্মানবোধহীন। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর পিতা নিজের সর্বস্ব দিয়ে বরপক্ষের দাবি পূরণ করেন। যখন দেখেন যে, বরের মামা কন্যার গহনা যাচাই করার জন্য স্যাকরা নিয়ে এসেছেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন বরপক্ষ কতটা অমানবিক। সেজন্যই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এমন ঘরে তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না। অন্যদিকে উদ্দীপকেও একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার পরিচয় পাওয়া যায়। কন্যার জন্য ভালো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কন্যার পিতা ধনী নন। তিনি বরপক্ষের যৌতুকের চাহিদা মেটাতে পারবেন না। 

যৌতুক প্রথা এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার চিত্র উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্প উভয় স্থানেই আছে। তবে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল চিত্রটি হলো যৌতুক প্রথা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে কন্যার পিতার অবস্থান, যা উদ্দীপকে নেই। এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। 


৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৮. বিয়ের জন্য কাজী সাহেব এলেন। এলেন বর-কনে পক্ষের সাক্ষী-উকিল। এজিন আনার জন্য উকিল সাক্ষী অন্দর মহলে যেতে চাইল। এমন সময় বরের বাবা রায়বাহাদুর গর্জে উঠে বললেন, “আগে ফ্রিজ আর মোটরসাইকেল, পরে বিয়ে।” কনের বাবা অক্ষমতা প্রকাশ করলেন। বিয়ের আসর চোখের পলকে ভেঙে গেল।

 ক. কে আসর জমাতে অদ্বিতীয়?

খ. মেয়ের বয়স পনেরো শুনে অনুপমের মামার মন ভার হলো কেন?

গ. উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের মধ্যকার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধর। 

ঘ. ‘উদ্দীপকের রায়বাহাদুর এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা একসূত্রে গাঁথা।’—মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশ আসর জমাতে অদ্বিতীয়। 

খ. মেয়ের বয়স পনেরো শুনে অনুপমের মামার মন ভার হলো। কারণ, তিনি মনে করলেন যে, ঐ মেয়ের বংশে কোনো দোষ আছে। 

তখনকার সময়ে আট থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেয়ার রীতি ছিল। এ সময়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে না হলে মনে করা হতো মেয়ের বংশে কোনো দোষ আছে। যে কারণে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। যে মেয়ের সাথে অনুপমের বিয়ের কথা চলছিল তার বয়স পনেরো। পনেরো বছর বয়সেও মেয়ের বিয়ে হয়নি, এমনটি ভেবে অনুপমের মামার মন ভার হলো। 

গ. বরপক্ষের অমানবিক আচরণের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। 

যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেছে। এর কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনেক মেয়ের জীবন। যৌতুকের কারণে বরপক্ষ কখনো কখনো হয়ে ওঠে অত্যন্ত অমানবিক। মূলত যারা যৌতুক দাবি করে তারা ব্যক্তিত্বহীন, অমানুষ। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে ব্যক্তিত্বহীনতা, অমানবিকতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত অনুপমের মামা। বেছে বেছে তিনি এমন একজন পাত্রী নির্বাচন করেন যার বাবা মেয়ের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হবেন না। কল্যাণীর বাবা মেয়ের বিয়েতে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। কিন্তু বরপক্ষ বিশেষত বরের মামা তার অমানবিকতার চূড়ান্ত পরিচয় দিয়েছেন স্যাকরা নিয়ে এসে মেয়ের গহনা যাচাই করতে চেয়ে। উদ্দীপকেও বরপক্ষের এমন অমানবিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। বরপক্ষ বিয়েতে বিশ হাজার টাকা পণ এবং বহু দানসামগ্রী দাবি করে। কন্যার বাবা পুরো টাকা জোগাড় করতে পারেনি। এ ব্যাপারটি জানার পর বিবাহসভায় বরের বাবা পুরো টাকা হাতে না পেলে বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দেয়।  

ঘ. “উদ্দীপকের রায়বাহাদুর এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামা একসূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি যথার্থ। 

যারা যৌতুক দাবি করে তারা লোভী, নিষ্ঠুর, অমানুষ। বিয়েতে নিজেদের দাবিকৃত পণ না পেলে তাদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই ধরা পড়ে। এমনকি চাহিদামাফিক যৌতুক না পেলে তারা বিয়ের আসর ত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করে না। তাদের এ ধরনের আচরণ সত্যিই অমানবিক। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে মামা অনুপমের বিয়েতে টাকা ও গহনা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন এবং কন্যার পিতা এতে সম্মত হন। বিয়ের দিন, বিয়ে অনুষ্ঠানের ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি কন্যার বাবাকে কন্যার গা থেকে গহনাগুলো খুলে আনতে বলেন; তিনি তা স্যাকরা দিয়ে যাচাই করাবেন। মামা এ ধরনের আচরণ ও কথাবার্তায় তার হীনতা, লোভ ও অমানবিকতারই পরিচয় দেন। উদ্দীপকের রায়বাহাদুরও অনুপমের মামার মতোই লোভী। তিনিও কন্যাপক্ষের কাছে অঢেল যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু কন্যার পিতা তা দিতে অসমর্থ হলে তিনি বিয়ের আসর থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা এবং উদ্দীপকের রায়বাহাদুর উভয়ই সমগোত্রীয়। তারা লোভী, হীন ও অমানবিক। এ কারণেই তারা একসূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।  

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

৯. আমাদের অন্যতম ব্যবসায়Ñ পাস বিক্রয়। এই পাস বিক্রেতার নাম ‘বর’ এবং ক্রেতাকে ‘শ্বশুর’ বলে। এক একটি পাসের মূল্য কত জান? “অর্ধেক রাজত্ব ও এক রাজকুমারী”। এম. এ. পাস অমূল্যরতœ, ইহা যে-সে ক্রেতার ক্রেয় নহে। নিতান্ত সস্তা দরে বিক্রয় হইলে, মূল্যÑ এক রাজকুমারী এবং সমুদয় রাজত্ব। আমরা অলস, তরলমতি, শ্রমকাতর, কোমলাঙ্গ বাঙালি কিনা তাই ভাবিয়া দেখিয়াছি, সশরীরে পরিশ্রম করিয়া মুদ্রালাভ করা অপেক্ষা ঙষফ ভড়ড়ষ শ্বশুরের যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করা সহজ।  

 ক. বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী কীসের ব্রত গ্রহণ করেছে? 

খ. কোনো কিছুর জন্যই অনুপমকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না কেন? 

গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের আংশিক প্রতিফলন মাত্র।’—মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী মেয়ে শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছে। 

খ. মামা অনুপমদের সংসারটাকে চারদিক থেকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছেন যে, কোনোকিছুর জন্যই তাকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না। 

অনুপমের বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। তবে মা থাকলেও তার আসল অভিভাবক তার মামা। তিনি সংসারের সবকিছুর ভার নিজের কাঁধে নিয়েছেন, সংসারের সকল ভাবনা তার। কেননা তিনি তাঁর বিচক্ষণতা দিয়ে সবাইকে হটিয়ে অনুপমদের স্বার্থরক্ষা করে এসেছেন এতকাল। এ কারণেই কোনোকিছু  নিয়ে অনুপমকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না। 

গ. আমাদের সমাজব্যবস্থায় পণপ্রথাকে যেভাবে বিবেচনা করা হয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের সে বিষয়টির প্রতি উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। 

আমাদের সমাজে বরপক্ষ যৌতুককে নিজেদের প্রাপ্য হিসেবেই মনে করে। যে ছেলে যত বেশি যোগ্য, তার মূল্য তত বেশি। অর্থাৎ ছেলের যোগ্যতাকে যৌতুকের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়।

‘অপরিচিতা’ গল্পে বর এমএ পাস এবং ধনী। আর সে কারণেই অনেক বড় ঘর থেকে তার বিয়ের সম্বন্ধ আসে। তার মামা অবশেষে এমন একটি মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে, যার বাবা বরকে সর্বস্ব দিতে কসুর করবে না। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি লক্ষ করি। এখানে বরকে বলা হয়েছে বিক্রেতা এবং শ্বশুরকে বলা হয়েছে ক্রেতা। মেয়ের বাবা তার সর্বস্ব দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এক অর্থে জামাই ক্রয় করেন। 

ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের আংশিক প্রতিফলন মাত্র। মন্তব্যটি যথার্থ। 

কন্যার বিয়ের কথা ভাবতে গেলে পরিবারকে প্রথমে যৌতুক নিয়ে ভাবতে হয় । কারণ মোটা অঙ্কের যৌতুক দিতে না পারলে মেয়েকে যোগ্য বরের সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না। এ বিষয়টি আমাদের সমাজে এমনভাবেই  প্রচলিত হয়ে গেছে যে, এটাকে একটা প্রথাই মনে করা হয়। মূলত বরপক্ষ এটাকে নিজেদের প্রাপ্য হিসেবেই গণ্য করে থাকে। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে বর এমএ পাস বিধায় তার পরিবারের যৌতুকের দাবিও বেশি। কন্যার বাবাকে চাপ দিয়ে যে-কোনো মূল্যে তারা বিশেষত অনুপমের মামা তা কড়ায়-গÐায় আদায় করতে বদ্ধপরিকর। উদ্দীপকেও যৌতুক প্রথার এ বিষয়টি লক্ষ করি। উদ্দীপকে বিধৃত হয়েছে যে, আমাদের দেশের ছেলেরা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিনিময়ে জোরপূর্বক আদায় করে শ্বশুরের সর্বস্ব। এ ব্যবস্থাই যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। 

‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল বিষয় যৌতুক প্রথা হলেও এতে আছে এই নিকৃষ্ট সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চিত্র। কল্যাণী এবং তার বাবা শম্ভুনাথ বাবু প্রতিবাদী চরিত্রের দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল যৌতুক প্রথার চিত্রই ফুটে উঠেছে। এদিক বিচার করে তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। 

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

১০. গ্রামের সকল লোক ধুমধামের শবযাত্রা ভিড় করিয়া দেখিতে আসিল। মেয়েরা কাঁদিতে কাঁদিতে মায়ের দুই পায়ে গাঢ় করিয়া আলতা এবং মাথায় ঘন করিয়া সিন্দুর লেপিয়া দিল, বধূরা ললাট চন্দনে চর্চিত করিয়া বহুমূল্য বস্ত্রে শাশুড়ির দেহ আচ্ছাদিত করিয়া দিয়া আঁচল দিয়া তাঁহার শেষ পদধূলি মুছাইয়া লইল। পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে, কলরবে মনে হইল না এ কোনো শোকের ব্যাপারÑ এ যেন বড় বাড়ির গৃহিণী পঞ্চাশ বর্ষ পরে আর একবার নতুন করিয়া তাঁহার স্বামীগৃহে যাত্রা করিতেছেন। 

 ক. কলিকাতার বাইরের বাকি জগৎটাকে মামা কী বলে জানেন?

খ. কল্যাণীর পিতার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল?

গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিশেষ একটি দিককেই নির্দেশ করে, পুরো বিষয়কে নয়।”—মন্তব্যটি আলোচনা কর।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. কলকাতার বাইরের বাকি জগৎটাকে মামা আন্দামান দ্বীপের অন্তর্গত বলে জানেন। 

খ. কল্যাণীর পিতার আর্থিক অবস্থা খুবই অপ্রতুল ছিল। 

কল্যাণীর পিতার পূর্বপুরুষদের আমলে ল²ীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। এখন তা শূন্য বললেই হয়, যদিও তলায় সামান্য কিছু বাকি আছে। দেশে বংশ মর্যাদা রক্ষা করে চলা সহজ নয় বলে তিনি পশ্চিমে গিয়ে বাস করছেন। সেখানে গরিব গৃহস্থের মতোই থাকেন। 

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ের অনুষ্ঠানাদির আড়ম্বরের বাড়াবাড়ির বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ।

সমাজবদ্ধ জীব মানুষ তার দৈনন্দিন নানা কার্যকলাপ ও পারস্পরিক লেনদেন এবং নানা উৎসব-অনুষ্ঠানাদিতে সামাজিকতার পরিচয় দেয়। সামাজিক এসব অনুষ্ঠান মূলত পারস্পরিক সৌহার্দ ও সৌজন্যের বহিঃপ্রকাশ। সমাজের কিছু বৈষয়িক ও স্বার্থবাদী মানুষ এমন অনুষ্ঠানগুলোকেও আড়ম্বর প্রকাশ ও অন্যের বিড়ম্বনার কারণে পরিণত করে তুলেছে।’

উদ্দীপকে মৃতের সৎকারের মতো একটি শোকাবহ অনুষ্ঠানকে অর্থের প্রাচুর্য ও তার বহিঃপ্রকাশে অনুরূপভাবে আড়ম্বরের বাড়াবাড়ি ফুটে উঠেছে। আড়ম্বর ও প্রাচুর্যের নির্দয় বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ের অনুষ্ঠানটিতেও। সেখানে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে এত বাহক যায় যে, তাদের বিদায় করতে কনেপক্ষকে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে। তারপর বিয়ের দিন ব্যান্ড, বাঁশি, শখের কনসার্ট প্রভৃতি যত প্রকার উচ্চশব্দ আছে সব একসঙ্গে মিশিয়ে বর্বর কোলাহলে বরযাত্রী দল সংগীতসরস্বতীর পদ্মবন মত্তহস্তীর ন্যায় দলিত-বিদলিত করে বিয়েবাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়েছিল। 

ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিশেষ একটি দিককেই নির্দেশ করে, পুরো বিষয়কে নয়—শীর্ষক বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। 

অর্থলোভী মানুষের কাছে অর্থই সব। আদর্শ, নৈতিক মূল্যবোধ, শিক্ষা সবকিছুই তাদের কাছে অর্থহীন। যে-কোনো মূল্যে তারা অর্থ ও নিজেদের প্রাধান্যকেই কামনা করে। তারা জীবনের সব ক্ষেত্রেই অর্থ ও প্রাধান্যের সমাগম চায়। স্কুল, কলেজে দু-চারটা পা দেয়া সন্তানকে অর্থ উপার্জনের রাস্তা হিসেবে তারা জ্ঞান করে। এতে অপরপক্ষের দুর্ভোগ ও অবমাননার কথা তাদের চেতনায় ন্যূনতম নাড়া দেয় না। 

উদ্দীপকে অর্থবিত্তের প্রাচুর্য প্রকাশের এক বিশেষ দিক ফুটে উঠেছে। সেখানে মৃতের সৎকারের মতো একটি শোকাবহ ঘটনা আর শোকাবহ থাকেনি, হয়ে উঠেছে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসববিশেষ। ‘অপরিচিতা’ গল্পেও বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষ কনেপক্ষের উপর তাদের অর্থবিত্তের প্রাচুর্যের এমনি উৎকট প্রদর্শনী দেখায় যে, কনেপক্ষের জন্য তা দুর্ভোগের অবমাননার বিষয়ে পরিণত হয়। উদ্দীপকটি গল্পের এ বিষয়টি তুলে ধরলেও এটি গল্পের এক বিশেষ দিক বা অংশবিশেষ মাত্র। 

‘অপরিচিতা’ গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষের আধিপত্য, নারীর প্রতি অবমাননা, দু-চারটা পরীক্ষা পাসের বিপরীতে সামাজিক ও আর্থিক নানা সুবিধা লাভ, বৈষয়িক লোকের অর্থলিপ্সা এবং নারীর অন্তর্নিহিত শক্তির বিজয়বার্তা ঘোষিত হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে গল্পের সামাজিক অনুষ্ঠানাদির আড়ম্বরতা ফুটে উঠেছে মাত্র। এভাবে প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। 



প্রশ্ন গুলোর উত্তর ও গল্পের বাকি CQ পড়তে ফাইলটি ডাউনলোড করুন.


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url